যক্ষা বা টিবি রোগ (Tuberculosis and
Treatment)
যক্ষা একটি সংক্রাসক ব্যাধি,
যা প্রধানত ফুসফুসকে আক্রান্ত করে । যক্ষা বলতে সাধারণভাবে আমরা ফুসফুসের যক্ষাকেই
বুঝি । তবে ফুসফুস ছাড়া ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে যক্ষা হতে পারে । যেমন-
লসিকাগ্রন্থি,হার ও গিট, অন্ত্র,হৃদপিন্ডের আবরণ ও মস্তিস্কের আবরন ইত্যাদিতে ও
যক্ষা হতে পারে । বাংলাদেশে বর্তমানে উন্নত ফ্রী চিকিৎসার ফলে যক্ষা সম্পূর্ণরুপে ভালো হয় ।
অতীথে মানুষ যক্ষা ধরা পরলে
হতাশ হয়ে জীবন যাপন করত, কারণ তখন যক্ষার কোন ঔষধ ছিলনা । ফলে মানুষ খুবই ভয় পেত ।
আজ সেই দিন আর নেই, যক্ষার ঔষধ নিয়মিত খাওয়ার পর যক্ষা সম্পূর্ণরুপে ভালো হয় ।
কারণ
(Cause)
যক্ষা রোগের জন্য দায়ী
জিবানুর নাম ‘মাইকোব্যাকটেরিয়াম
টিউবারকিউলোসিস’
(Mycobacterium
tuberculosis)
। এটি এক প্রকার ব্যাকটেরিয়া । এই জিবানু
যক্ষা রোগীর কফের সংগে বের হয়ে আসে এবং বাতাসের মাধ্যমে অন্য লোকের ফুসফুসে প্রবেশ
করে রোগের সৃস্টি করে । তাই কাচা দুধ পান করা নিরাপদ নয় । যক্ষা যে কোন বয়সে হতে
পারে । দরিদ্র এবং নিম্নমানের জীবন যাপনের
সঙ্গে যক্ষার ঘনিস্ট সম্পর্ক রয়েছে । অপুষ্টি এবং ঘনবসতিপুর্ন বাসস্তান রোগ
বিস্তারে সহায়তা করে । সচেতনতার অভাব এবং কুসংস্কার এই রোগ প্রতিরোধের প্রধান
অন্তরায় ।
লক্ষণ
ও উপসর্গ (Symptom & Sing)
·
রোগী দীর্ঘদিন যাবৎ খূসখুসে
কাশিতে ভুগতে থাকে ।
·
ধীরে ধীরে ক্ষুধামন্দা, ওজন কমে যাওয়া ও সন্ধ্যার সময় অল্প অল্প
জ্বর হতে থাকা ।
·
ঠিকমত চিকিৎসা
না হলে শেষের দিকে কাশির সঙ্গে রক্ত যাওয়া, ফুসফুসে পানি জমা, শ্বাসকস্ট, বুকে
ব্যাথা ইত্যাদি নানা ধরনের উপসর্গ দেখা দিতে পারে ।
·
শিশুদের ক্ষেত্রে সাধারণত জ্বর আসা, খাওয়ার অরুচি, ওজন কমে যাওয়া এসব
লক্ষণ দেখা যায় । খুব কম শিশুরই কাশির সাথে রক্ত যায় ।
রোগ
নির্ণয় (Diagnosis) যক্ষা রোগের লক্ষণ ও উপসর্গগুলো কারো দেখা দিলে এবং তার
আশেপাশে আক্রান্ত রোগী থাকলে তা থেকে যক্ষা হয়েছে বলে সন্দেহ করা যেতে পারে । এ
অবস্থায় রোগীর কতগুলো পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে হবে । এগুলো হচ্ছে –
- বুকের এক্স-রে,
- রোগীর কফ পরীক্ষা,
- রোগীর রক্ত পরীক্ষা,
এদের মধ্যে কফের
পরীক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ । কারণ কফের মধ্যে যক্ষার জিবাণু পাওয়া গেলে এ রোগের
প্রত্যক্ষ প্রমাণ । যে লোকের কাশি তিন সপ্তাহের বেশি স্থায়ী তার বুকের ভেতরের কফ
অবশ্যই পরীক্ষা করতে হবে । এছাড়া রোগীর বুকের এক্সরে দেখেও যক্ষা সনাক্ত করা যায় ।
চিকিৎসা (Treatment) সঠিকভাবে রোগ সনাক্ত না করে যক্ষ্র চিকিৎসা করা যাবে না । কারণ এ রোগের চিকিৎসা দীর্ঘস্থায়ী এবং ব্যায় বহুল । তাই সঠিকভাবে রোগ সনাক্ত করার পর
সম্পূর্ণরুপে নিশ্চিত হয়ে কেবল মাত্র এ রোগের চিকিৎসা করা উচিৎ । আগেকার
দিনে একটা প্রচলিত প্রথা চিল যে ‘যার হয় যক্ষা, তার নাই রক্ষা’ । কিন্ত এখন আর সে অবস্থা নেই । নিয়মিত
মাত্রায় এবং নির্দিষ্টভাবে ঔষধ খেলে যক্ষা সম্পূর্ণরুপে ভালো হয় । তবে দীর্ঘদিন
যাবত চিকিৎসা হয় বলে নিয়মিত ঔষধ খাওয়া এবং রোগীর ও
স্বাস্থ কর্মির সমবেত প্রচেষ্টা ছাড়া নিরাময় সম্ভব নয় । একই ঘরে অথবা পড়শীদের
মধ্যে সম্ভাব্য রোগী খুজে বের করে উপযোক্ত চিকিৎসা না দিলে একই রোগীর পূণরায় আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকে ।
যক্ষার
চিকিৎসা তিন ভাবে করা যায়ঃ
৬ মাস ব্যাপি চিকিৎসা, ৯ মাস ব্যাপি চিকিৎসা, ১২ মাস ব্যাপি চিকিৎসা ।
v
৬ মাসব্যাপি চিকিৎসাঃ
প্রথম দুই মাস
সূচনাকালঃ রিফামপিসিন + আইসোনিয়াজিড + পাইরাজিনামাইড + ইথামবিউটল বা
ষ্ট্রেপটোমাইসিন
পরের চার মাস ইচিকৎসাঃ রিফামপিসিন+ আইসোনিয়াজিড
v
৯ মাসব্যাপি চিকিৎসাঃ
টিউবারকুলার মেনিনজাইটিস,
ডিস্সেমিনেটেড টিউবারকোলোসিস বা মেরুদন্ড সম্পর্কিত স্নায়ু সমস্যার ক্ষেত্রে ৯ মাস
মেয়াদি চিকিৎসা প্রযোজ্য ।
প্রথম দুই মাস সূচনাকালঃ রিফামপিসিন
+ আইসোনিয়াজিড + পাইরাজিনামাইড + ইথামবিউটল বা ষ্ট্রেপটোসাইসিন ।
পরের সাত মাস চিকিৎসাকালঃ রিফামপিসিন + আইসোনিয়াজিড ।
(আইসোনিয়াজিড দ্বারা
পেরিফারাল নিউরোপ্যাথি যেন না হয় সেজন্য ট্যাবলেট পাইরেডক্সিন ৫০ মিলি. প্রতিদিন
খাওয়ানো উচিৎ)
যক্ষা
রোগে ব্যবহৃত ঔষধের মাত্রা বা ডোজঃ
আইসোনিয়াজিড – ৫ মিলি./কেজি/দিন হিসাবে (৩০০ মিলি./দিন)
রিফামপিসিন –রোগীর ওজন ৫০ কেজির কম হলে ৪৫০ মিলি./দিন
খালি পেটে ।
-রোগীর ওজন ৫০ কেজির বেশী হলে ৬০০
মিলি.৩ দিন খালি পেটে ।
পাইরাজিনামাইড - রোগীর ওজন
৫০ কেজির কম হলে ১৫০০ মিলি./দিন ।
-রোগীর ওজন ৫০ কেজির বেশী হলে ২০০০
মিলি./ দিন ।
ইথামবিউটল- সাধারণত ১০০০
মিলি./দিন ।
মনে রাখতে হবে যক্ষা রোগের
চিকিৎসা চলাকালে এ সব রোগের পার্শ প্রতিক্রিয়া
নিয়া রোগী আসতে পারে ।
তাই ঔষধ বা চিকিৎসা দেয়ার
পাশাপাশি রোগীকে ঔষধের সম্ভাব্য পার্শ প্রতিক্রিয়া গুলো জানিয়ে দিতে হবে । ঔষধের
নিম্নরুপ পার্শ প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে রোগীকে পরামর্শের জন্য নিকটস্থ হাসপাতালে
পাটিয়ে দিতে হবে ।
পার্শ
প্রতিক্রিয়া (Side Effects)ঃ
v রোগীর হাত পা ঝিন ঝিন
করতে পারে ।
v রোগীর প্রস্রাবের রং
হলুদ বা কমলা রঙের হতে পারে ।
v
রোগীর মাথা ঘোরা, চোখে ঝাপসা দেখা, কানের ভেতর ভন ভন শব্দ শোনা
এসব উপসর্গ দেখা দিতে পারে ।
v
রোগী দুর্বল হয়ে যেতে পারে ।
v
কোন কোন রোগীর ঔষধের প্রতি এলার্জি থাকতে পারে । সেক্ষেত্রে
শরীর এলার্জির লক্ষণ দেখা মাত্র ঔষধটি বন্ধ করে দিতে হবে । এবং নিকটস্থ
স্বাস্থকেন্দ্রে বা হাসপাতালে পাটিয়ে দিতে হবে । সেখানে বিশেষজ্ঞদের মতামতের
ভিত্তিতে ঔষধ পরিবর্তন করা যেতে পারে । দেশের প্রায় সব সরকারী হাসপাতাল গুলোতে যক্ষা
রোগীকে বিনামূল্যে ঔষধ দেয়া হয় । রোগীকে হাসপাতালে পাটিয়ে সেখান থেকে ঔষধ নিয়ে
আসার পর রোগী সেগুলো নিয়ম মেনে খায কি না তা লক্ষ্য রাখা অত্যন্ত জরুরী । দুই চার
মাস ঔষধ খেয়ে বন্ধ করার জন্য বাংলাদেশে যক্ষা রোগের ঔষধের রেজিস্টেন্স টিবি রোগীর
সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে যা ভবিষ্যতে ভয়াবহ রোপ নিতে পারে ।
প্রতিরোধ
(Prevention)ঃ
i.
রোগী শনাক্ত করে নিকটস্থ স্বাস্থ কেন্দ্রে প্রেরণ এবং ঔষধের
কোর্স সম্পন্ন করা ।
ii.
শিশুর জন্মের সাথে সাথে তাকে বিসিজি টিকা দেয়া ।
প্রচলিত ঔষধ সমূহ [Available Drugs]
- ইফামপিন (Ifampin) [Ranata] ; Every capsule has 450 ml Rifampicin . One pack
has 20 Capsule.
- আইসোরিফাম (Isorifam) [Acme]; Every capsule has 100 ml Isoniazid and 250 ml
Rifampicin. One pack has 40 Capsule.
- মাইকোনিল (Myconil) [Beximco]; ; Every capsule has 300 ml Rifampicin . One
pack has 100 Capsule.
- রিমাকটাজিড (Rimactazid) [Sandoze] ; ; Every capsule has 450 ml Rifampicin .
One pack has 50 Capsule.
- রিমসিউর (Rimcure) [Sandoze] ; ; Every capsule has 150 ml Rifampicin, 75 Isoniazid and 400ml
Parazinamide . One pack has 100 Capsule.
Thanks
ReplyDeleteধন্যবাদ
ReplyDelete